আমেরিকার টুইন টাওয়ার – বাংলাদেশের এফ আর টাওয়ার . . . আর্তনাদ একই
১১ সেপ্টেম্বর। ২০০১ সাল। আমি তখন “দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার” বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে। রাত প্রায় দশটা। আমি পেস্টিং রুমে। পত্রিকার প্রথম পাতা ও শেষ পাতার মেক-আপ প্রায় শেষ।
হঠাৎ পত্রিকার সম্পাদক সাহেবের ফোন। বলছেন টিভি অন করুন। তাড়াতাড়ি দেখুন। টিভিতে দেখলাম বড় করে লাল রংয়ের লেখা BREAKING NEWS: AMERICA UNDER ATTACK. চমকে ওঠার মত News.
এখন প্রথম পাতার মেক-আপ ভাঙতে হবে। নতুন করে Lead News লিখতে হবে। কিন্তু এক বাক্যের এক লাইনের News দিয়ে তো আর বিশ্ব কাঁপানো News কে Lead News করা যাবে না। মহাচিন্তা। বিস্তারিত News কোথায় পাওয়া যাবে . . . . . . . . !
এমন সময় Fax Machine – এ আওয়াজ। Machine থেকে পিওন একটা কাগজ এনে দিল। বাংলা লেখা। বাংলাবাজার পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধির রির্পোট ১০/১২ লাইনের।
সেটা ছিলো টুইন টাওয়ারে এক বাংলাদেশীর হৃদয় বিদারক কয়েকটি কথা। সেই বাংলাদেশীর নাম আলমগীর। টুইন টাওয়ারের একটির একবারে উপরের দিকের তলায় ছিল তার অফিস। হামলার পর দুটি টাওয়ারই দ্রুত গতিতে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছিল। এমন সময় আলমগীর বাসায় ফোন দিয়ে বলেন “আমাদের বিল্ডিং (টাওয়ার) নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি জানি না। আমার জন্য দোয়া কোরো।” এরপর ফোন বন্ধ। তারপর তার আর খোঁজ পায়নি আত্মীয়স্বজন।
আলমগীরের সেই আর্তনাদের খবর দিয়েই সেদিন পত্রিকা বের করতে হয়েছিলো। আলমগীরের সেই হৃদয় বিদারক আর্তনাদ আমার মাঝে মধ্যেই মনে পড়ে – পীড়া দেয়।
গত ২৮ মার্চ, ২০১৯, দুপুর। সেই একই পীড়াদায়ক আর্তনাদ। এবার ঘটনাস্থল বাংলাদেশ। রাজধানীর বনানীতে। এফ আর টাওয়ার। ২৩ তলা ভবন। টুইন টাওয়ার ছিল ১০০ তলার।
এখানে হামলা নয়। এক মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ২৫/২৬ জনের প্রানহানি ও বহুলোক অগ্নিদগ্ধ হন। ভবনে আটকে পড়া অনেকেই মৃত্যুর আগে ফোনে তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে যে আঁকুতি ভরা আর্তনাদ করেন তা পরের দিন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তা বহু পাঠকের চোখ ভিজিয়ে দেয়।
এদের কয়েকজনের আকুতি ভরা আর্তনাদ ছিল এমন. . . . . . . .
টাঙ্গাইলের মীর্জাপুরের নাহিদুল তার ভাই তৌহিদুলকে বলেন “আমাদের ভবনের আগুন বেড়েই চলেছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে। আমাকে বাচাঁও ভাই।” তারে আগে স্ত্রীকে ফোনে বলেন “. . . . . . . আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলো। আমাকে মাফ করে দিতে বলো।”
নওগার বোয়ালিয়ার মনজুর হাসান ছিলেন ২১ তলায়। ছোট ভাই মেহফুজ যুবায়েরকে বলেন “ভাই আমি মারা যাচ্ছি। সবাই অফিস থেকে বের হয়ে গেছে। কেউ আমাকে সাহায্য করছে না। অফিসের চেয়ারেই বসে আছি। তোরা আমার জন্য দোয়া করিস। ছেলেমেয়েকে দেখে রাখিস।” উল্লেখ্য, ২০০০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটায় মনজুর এক পা হারান। সবাই দৌড়ালেও তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার র্মীজা আতিক ভবনের ১৩ তলায় ছিলেন। স্ত্রীকে ফোন করে বলেন “আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। অফিসে আগুন লাগছে। আমি আটকা পড়ছি। ধোঁয়ায় কিছু দেখছি না। হয়তো বাঁচবো না। তুমি আমাকে মাফ করে দিয়ো। বাচ্চাদের দেখে রেখো।” স্ত্রী কিছু বলার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এরকম পীড়াদায়ক করুণ আর্তনাদের খবর আঠেরো বছর আগে টুইন টাওয়ারের সেই আলমগীরকেই বারবার আমাকে স্বরণ করে দিচ্ছে। ভাবছি, এরকম ঘটনায় পৃথিবীর সব মানুষের আর্তনাদ হয় একই। আল্লাহ তাদের সবাইকে বেহেস্ত নসিব করুন।
📝Ruhul Quddus Moni @Rotary club, sher e bangla nagar, Dhaka
Contacts Us
No comments