কোর'আন হাদিসের আলোকে করোনা মহামারীতে করনীয় ও বর্জনীয়।
কোর'আন হাদিসের আলোকে করোনা মহামারীতে করনীয় ও বর্জনীয়।
বিসমিল্লাহীর
রহমানির রহীম
আসসালামু আলাইকুম,
আমরা সবাই অবগত গোটা পৃথিবী আজ করোনা মহামারীর কারনে স্থম্ভিত।
পৃথিবী
আজ থর থর করে কাপছে। সামাজিক যোগাযগ মাধ্যমে চলছে করোনা নিয়ে নানান আলোচনা পর্যালোচনা
এবং ভুল সঠিক উভয় ত্বথ্যই ছড়িয়ে পরছে ।তাই অনেক ভাই বোন ,করোনায় কি করনীয় কি বর্জনীয়
তা বুঝতে হিমসিম খাচ্ছে।
এখানে আমরা কোর’আন হাদিসের আলোকে করোনায় করনীয় ও বর্জনীয়
সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেস্টা করব ইনশা আল্লাহ।
১। আমাদের প্রথম কাজ হল আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
“আপনি বলুন, আমাদের শুধু তাই আক্রান্ত করতে পারবে যা আল্লাহ
আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন।“
(সুরা তাওবা, ৯ ঃ৫১)
২।করোনা যেহেতু
সংক্রামক ব্যাধি,তাই করোনা সংক্রামনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
রাসুল
সাঃ , সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যাক্তির কাছে যেতে নিষেধ করেছেন।সহিহ
মুসলিম এ এসেছে সাকিব গোত্রের এক প্রতিনীধি সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল,রাসুল সাঃ
তাকে কাছে আসতে নিষেধ করলেন।তাকে এই বলে খবর পাঠালেন,
“আমরা তোমাকে বাইয়াত করে নিয়েছি,
তুমি ফিরে যাও।“
(সহিহ
মুসলিম হাঃনং-২২৩১)
সহিহ বুখারিতে এসেছে রাসুল সাঃ বলেছেন,
“সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাক,
যেভাবে
তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো”
(সহিহুল বুখারিঃ৫৭০৭)
রাসুল সাঃ বলেন,
“রোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন তার উটগুলোকে
সুস্থ উটের কাছে নিয়ে না যায়”
(সহিহ মুসলিমঃ২২২১)
রাসুল সাঃ এই নির্দেশ এই জন্যই দিয়েছেন যাতে রোগাক্রান্ত
উট থেকে সুস্থ উটে রোগ সংক্রামিত না হয়।এই হাদিসগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারলাম করোনায়
আক্রান্ত রোগিদের সংস্পর্শে যাওয়া যাবেনা।
৩। মহামারির সময় যারা যেখানে অবস্থান করে ,রাসুল সাঃ তাকে
সেই অবস্থানে থাকতে বলেছেন,উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রাঃ ,রাসুল সাঃ কে মহামারি সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,
“এটি একটি আজাব।আল্লাহ যার কাছে ইচ্ছা এটিকে প্রেরন করেন।আর
আল্লাহ তা’আলা তার মুমিন বান্দাদের জন্য এটিকে রহমত বানিয়েছেন।যে ব্যাক্তি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় সবরের সাথে অবস্থান করে
এবং অন্তরে দৃড়ভাবে এই বিশ্বাস রাখে যে ,আল্লাহ তকদিরে যা রেখেছেন তাই হবে,তাহলে সে
একজন শহীদের সমান সওয়াব পাবে।
(সহিহুল বুখারিঃ৩৪৭৪)
রাসুল সাঃ বলেন
“যখন
তোমরা কোন অঞ্চলে মহামারীর বিস্তারের কথা শোনো,তখন সে এলাকায় প্রবেশ করোনা।আর তোমরা
যে অঞ্চলে অবস্থান করো ,সেখানে যদি মহামারীর
বিস্তার ঘটে ,তবে সেখান থেকে বেড়িয়ে
যেয়ো না।“
(সহিহুল বুখারিঃ৫৭২৮)
যে সকল ভাই-বোন বিদেশে বা করোনায় আক্রান্ত শহরে অবস্থান
করছেন তারা সেখানেই অবস্থান করুন।অথবা বাংলাদেশেও যেসব ভাই-বোন করোনায় আক্রান্ত শহর
বা গ্রামে অবস্থান করছেন,তারাও আপন আপন স্থানে অবস্থান করুন।পরিস্থিতি ভাল না হও্্যা
পর্যন্ত আপনারা সবর করুন কস্ট হলেও আপন আপন স্থানে অবস্থান করুন।হাদিসের নির্দেশানুসারে
আমাদের উচিত আপন আপন স্থানে অবস্থান করা।
যারা করোনা আক্রান্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন,তাদের উচিত ডাক্টারদের
নির্দশনানুযায়ী হোম কোয়ারেন্টইনে থাকা,যাতে অন্যন্য ভাই বোন রা আক্রান্ত না হয়।তা না
হলে শরীয়ার আইন লঙ্ঘন করার কারনে গুনাহগার হবেন।
৪।আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“জ্ঞানিদের জিজ্ঞেস
করো ,যদি তোমরা না জানো”
(সুরা নাহলঃ৪৩)
আল্লাহ
বলেছেন তোমরা যে ব্যাপারে না জানো জ্ঞানিদের জিজ্ঞেস করো ,আর এই ব্যাপারে জ্ঞানী হল
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন,তারা আমাদের যে পরামর্শ দিচ্ছেন তা আমাদের পালন করতে হবে।
যেমনঃ
বার বার হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া,মুখে ,চোখে ,নাকে হাত না দেওয়া ,পরিষ্কার
থাকা ,জন সমাগম এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
আর আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাতে তিনি আমাদের এই মহামারী
থেকে পরিত্রান দেন।কোর’আন হাদিসে বিপদ এবং মহামারী থেকে বাচার অনেক দোয়া বর্নিত আছে ।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوسَى الْبَلْخِيُّ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، - الْمَعْنَى - حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عُبَادَةُ بْنُ مُسْلِمٍ الْفَزَارِيُّ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَعُ هَؤُلاَءِ الدَّعَوَاتِ حِينَ يُمْسِي وَحِينَ يُصْبِحُ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِي وَمَالِي اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِي " . وَقَالَ عُثْمَانُ " عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ وَكِيعٌ يَعْنِي الْخَسْفَ .
“হে
আল্লাহ আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।হে আল্লাহ!আমি আপনার
নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন,দুনিয়া ,পরিবার ও অর্থ-সম্পদের ।হে আল্লাহ!আপনি
আমার গোপন ত্রুটিসমুহ ঢেকে রাখুন,আমার উদ্বিগ্নতাকে রুপান্তর করুন নিরাপত্তায়।হে আল্লাহ
!আপনি আমাকে হেফাজত করুন সামনের দিক থেকে ,পিছনের দিক থেকে,ডান দিক থেকে , বাম দিক
থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে ।আর আপনার মহত্বের উসিলায় আশ্রয় চাই আমার নিচ থেকে আসা
আক্রান্ত হওয়া থেকে।“
(সুনান আবু দাউদঃ৫০৭৪,সুনান ইবনে মাজাহঃ৩৮৭১)
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’
(-সূনানে আবু দাউদ, সূনানে তিরমিজি)
আল্লাহ আমাদের জানা বুঝা এবং আমল করার তৌফিক দান করুন এবং
আমাদের ক্ষমা করুন।
...আমিন...
No comments